জানুন বিজ্ঞানী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ওষুধ আবিষ্কারের ইতিহাস

সমাজ সংস্কারক হিসেবে আমরা ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরকে জানি। বিধবা বিবাহ প্রথার প্রবর্তক। বহুবিবাহ প্রথা আইন করে বন্ধ করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান প্রাতঃস্মরণীয়। নারী শিক্ষার বিষয়ে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন সমসাময়িক যুগে। 

কিন্তু, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যে একজন বিজ্ঞানী ছিলেন সেই বিষয়ে আমরা সবাই অবগত নই। ইতিহাসের পাতায় বিজ্ঞানী হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে খুঁজে পেতে আপনাকে বেশ পরিশ্রম করতে হবে। আমি একটা ছোট্ট টিপস দিচ্ছি, চিকিৎসা বিজ্ঞানের আদি পুস্তক "মেটেরিয়া মেডিকায়" আপনি হাঁপানির ঔষধ এর আবিষ্কারক হিসেবে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম খুঁজে পাবেন। হ্যাঁ হাঁপানি চিকিৎসার ওষুধ Blatta orientalis তৈরি করেছিলেন বিদ্যাসাগর মহাশয়। 

বিদ্যাসাগর মহাশয় এই হাঁপানির ওষুধ তৈরির পেছনে একটা মজাদার গল্প রয়েছে যেটা আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।

পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাঁপানি রোগ ছিল। প্রতিবছর শীত কালে তার এই হাঁপানি রোগ ব্যাপক আকার ধারণ করত। হাঁপানি রোগে বেশ কষ্ট পেতেন বিদ্যাসাগর। উপশম হিসেবে তিনি দুবেলা চা খেতে। চা খাওয়ার ফলে তার সন্ধ্যের ঠান্ডায় হাঁপানির কষ্ট কিছুটা লাঘব হত। এরকমই একদিন শীতের সময় প্রচন্ড হাঁপানির কষ্টের মধ্যে রয়েছেন বিদ্যাসাগর মহাশয়। তাই তার ভৃত্য কে ডেকে চা বানানোর আদেশ দিলেন। অদ্ভুত বিষয়, চা খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তার হাঁপানি কষ্ট ম্যাজিকের মতন কমে গেল। কি হলো ব্যাপারটা? বোঝার চেষ্টা করার জন্য কাপের তলায় থাকা তলানি চা টা ভালো মতন পর্যবেক্ষণ করলেন বিদ্যাসাগর। সিদ্ধান্ত হিসেবে তার মনে হলো চায়ের মধ্যে কেমন একটু আদা আদা গন্ধ। ভৃত্যকে ডাক দিলেন ঈশ্বরচন্দ্র। "চায়ে কি আদা দিয়েছো আজকে?"

"না বাবু" জবাব দিলেন তার পরিচারক।

এবার ঈশ্বরচন্দ্র বললেন, "চলো তো দেখি কোন কেটলিতে চা করেছ!"

চায়ের কেটলি টা পরীক্ষা করে তার ভেতর দুটো মৃত আরশোলাকে খুঁজে পেলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তার চাকর তো ভয়েই অস্থির। সে স্বীকার করল যে, তাড়াহুড়োতে চা করতে গিয়ে সে কেটলিটা না ধুয়ে চায়ের জল বসিয়ে ছিল। ফলে, ওর ভেতর যে দুটো আরশোলা পড়েছিল তা সে খেয়াল করেনি। বিদ্যাসাগর চাকরকে কিছু না বলে বিদায় জানালেন। কারণ তিনি হাতে পেয়ে গেছেন হাঁপানি রোগের উপশমের ঔষুধের ফর্মুলা।

খুঁজতে শুরু করে দিলেন আরশোলা। রান্নাঘর থেকে বেশকিছু আরশোলা জোগাড় করলেন। তারপর সেই আরশোলা গুলোকে জলে সেদ্ধ করে বানালেন তরল। সেই তরলকে ছেকে অ্যালকোহল এর সাথে মিশিয়ে ওষুধ তৈরি করলেন। পরীক্ষার জন্য সেই ওষুধ নিয়মিত সেবন করতে শুরু করলেন বিদ্যাসাগর মহাশয়। ফল পেলেন হাতেনাতে। হাঁপানির কষ্ট থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারলেন। আরো বেশ কয়েকজন হাঁপানি রোগীর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে শুরু করলেন বিদ্যাসাগর। ওষুধে কি আছে কেউ না জানলেই হলো। কিন্তু তার ওষুধ থেকে সবাই বেশ উপকার পেতে শুরু করলো। কথাটা চাউর হয়ে গেল বাজারে। দলে দলে হাঁপানি রোগীরা ভিড় করতে শুরু করলো বিদ্যাসাগরের বৈঠকখানায়।

Blatta orientalis হাঁপানি রোগের এই ওষুধটির আবিষ্কর্তা আমাদের প্রাতঃস্মরণীয় বাঙালি মহাপুরুষ শ্রী ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন